শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৮ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম: শনিবার ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তন। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো: আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাস্যরসাত্মক কথা বলে শ্রোতাদের প্রাণবন্ত করে রাখেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ঢাবির সমাবর্তনেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। তার স্বভাবসুলভ হাস্যরসাত্নক বক্তিতায় পুরো সমাবর্তন মাঠে এনে দেয় ভিন্নরকম এক অভিব্যাক্তি।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি ১৯৬১ সনে ম্যাট্রিক পাস করি, থার্ড ডিভিশন পেয়ে। আর ইন্টারমিডিয়েটেও এক বিষয়ে রেজাল্ট খারাপ ছিল। এরপর আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হয়নি। আমার ভর্তি তো দূরের কথা আমাকে ভর্তি ফরমও দেয়া হয়নি। অথচ আল্লাহর কি লীলা খেলা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এসে আমি ভর্তি ফরম পাইনি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আমি। বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়েরই আচার্য।
তিনি বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারিনি, তবে ছাত্র রাজনীতি করার কারণে মোটামুটি এখানকার সব হলে আমি এসেছি, ছিলাম। তবে রোকেয়া হলে ছিলাম না, তবে এর আশেপাশে ঘোরাঘুরি করেছি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৬১ সালে ম্যাট্রিক পাস ও এরপর ইন্টারমিডিয়েট পাস করে বিএ পাস করেছি ১৯৬৯ সালে। বারবার পরীক্ষা দিয়েও ফেল করার পরে আত্মীয়স্বজনসহ সবাই বিএ পাসের বিষয়টি জিজ্ঞাসা করা শুরু করলো। ছাত্র খারাপ ছিলাম শুধু তাই নয়, দুই দুই বার কারাগারেও ছিলাম। তখন কিশোরগঞ্জের এক সমাবেশে ঘোষণা করি, যতদিন পর্যন্ত আইয়ুব খান ও মোনায়েম খানকে উৎখাত করা যাবে না ততদিন আমি বিএ পাস করবো না- উত্তর হয়ে গেছে।
রাষ্ট্রপতি এ সময় গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে বলেন, ব্যক্তি ও পরিবারের চেয়ে দেশ ও জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। দেশের গণতন্ত্রের ভিতকে মজবুত করতে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে গ্র্যাজুয়েটদের।
তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমেই সে নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। অতীতের ছাত্র রাজনীতি এবং বর্তমানের ছাত্র রাজনীতির মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ষাটের দশকে ছাত্র-রাজনীতির আদর্শ ছিল দেশ ও জনগণের কল্যাণ সাধন করা। সেখানে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের কোন স্থান ছিলনা। ছাত্ররাই ছাত্র-রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করত। লেজুড়বৃত্তি বা পরনির্ভরতার কোন জায়গা ছিলনা। কিন্তু বর্তমানের ছাত্র রাজনীতিতে আদর্শের চেয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের প্রাধান্য বেশি। কিছু ক্ষেত্রে অছাত্ররাই ছাত্র রাজনীতির নেতৃত্ব দেন। ফলে ছাত্র রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থা ও সমর্থন কমে যাচ্ছে।
তিনি আদর্শভিত্তিক ও কল্যাণমুখী ছাত্র রাজনীতি করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। নিয়মিত ছাত্রদের ছাত্র রাজনীতির নেতৃত্বে আনতে তিনি ডাকসু নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। অন্যায় ও অসত্যের কাছে মাথা নত না করার জন্যও তিনি গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সমাজ ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থেকে জাতির প্রত্যাশা পূরণে গ্র্যাজুয়েটদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।